নিউজ ডেস্ক ::
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের আসবাবপত্র ক্রয়ে ২০ কোটি ৮৬ লাখ টাকার ভুয়া ফার্নিচার বিল আটকে দেয়ার পর অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে কাজ শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার সকাল ১০টায় দুর্নীতি দমন কমিশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. মাহবুব আলমের নেতৃত্বে একটি দল কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজে গিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। এ বিশাল অঙ্কের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সম্প্রতি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও মন্ত্রণালয়ের নথি এবং সংসদীয় কমিটির কার্যপত্র থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের জুলাইয়ে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ রেজাউল করিম অনেকটা একক ক্ষমতায় অপব্যবহার করে এসএল ট্রেডার্সকে আসবাবপত্র সরবরাহের কার্যাদেশ দেন। তবে কি পরিমাণ আসবাবপত্র লাগবে, সে বিষয়ে তিনি দরপত্র নির্বাচন কমিটির কাছ থেকে কোনো চাহিদাপত্র নেননি।
যে কারণে ঠিকাদার ৩১ ধরনের ২ হাজার ৪২২টি আসবাবপত্র সরবরাহ করার সুযোগ পেয়েছেন। যার অর্ধেকের চেয়ে বেশি কলেজের প্রয়োজন নেই। তাছাড়া বাজার মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যও দেখানো হয়েছে এ আসবাবপত্রগুলো। যে কারণে টাকার অংক লাফিয়ে উঠে ২১ কোটিতে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, যে পরিমাণ আসবাবপত্র কেনা হয়েছিল তার বেশিরভাগই অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। কিছু কিছুতে পোকা-মাকড়ের নিরাপদ বাসা-বাড়িও হয়েছে। সূত্রমতে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব সিরাজুল ইসলাম ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে গিয়ে দেখতে পান, বিভিন্ন কক্ষ ও হলে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র বসানোর পর অবশিষ্ট আসবাবপত্র একাধিক কক্ষে স্তূপ করে ফেলে রাখা হয়েছে।
অনিয়ম আঁচ করতে পেরে তিনি ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদারকে প্রধান করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করেন। এ কমিটি তদন্ত শেষ করে ২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট প্রতিবেদন জমা দেয়।
সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে অবসরে যাওয়ার আগে রেজাউল করিম এসএল ট্রেডার্সের কাছ থেকে যাবতীয় মালামাল বুঝে নেন। এরপর থেকেই মিঞা ছাদুল্লাহ বিল আদায়ের জন্য নতুন অধ্যক্ষ সুভাস চন্দ্র সাহাকে চাপ দিতে থাকেন এবং বিলের জন্য তিনি অধ্যক্ষকে একটি জিও দেখান। এর ওপর ভিত্তি করে ১২ ডিসেম্বর সুভাষ চন্দ্র সাহা ২০ কোটি ৮৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকার বিল অনুমোদন ও বরাদ্দ দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিঠি লেখেন।
অধিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক আবদুর রশিদ বরাদ্দ দেয়ার জন্য স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি লেখেন। জবাবে ১৬ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ফয়সাল শাহ অধিদফতরকে জানান, ঠিকাদারের বিল পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ নেই। রাজস্ব খাতের টাকা থেকে বিল পরিশোধ করা সম্ভব হলেও অর্থ মন্ত্রণালয় তাতে সম্মতি দেয়নি।
মন্ত্রণালয় জানায়, এসএল ট্রেডার্সের বিল পরিশোধের জন্য কোনো জিও জারি হয়নি। ঠিকাদার অধ্যক্ষ সুভাষকে যে জিও দেখিয়েছেন তা ভুয়া।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সুভাষ চন্দ্র সাহা বলেন, আমি যোগদান করার আগে থেকে এখানে কিছু বিষয় নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ ছিল। সেসব বিষয়ে দুদক তদন্ত করছে আমাদের পক্ষ থেকে উনাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। দুদকের তদন্তটিমের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এসএম জাহিদ ও মো. আবদুর রব মাসুদ। দুদকের সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাশসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
তবে তদন্ত কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়ে দুদকের উপ-পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে তদন্ত কাজ শুরু করেছি। এখন ফার্নিচারের বাস্তব অবস্থা, গুণগত মান এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ে দেখা হচ্ছে।
এছাড়া তদন্ত আরও অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা বা সঠিকভাবে নির্ণয়ের জন্য কক্সবাজার গণপূর্ত অধিদফতরের ২ জন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীও রাখা হয়েছে।
পাঠকের মতামত: